January 23, 2021, 7:56 am
সপ্তাহ ঘুরলেই দেশের খুচরা বাজারে বাড়ছে খোলা ভোজ্য তেলের দাম। চলতি সপ্তাহে খুচরা বাজারে লিটারে চার টাকা বেড়েছে। আর পাইকারিতে মণপ্রতি বেড়েছে ২০০ টাকা। পাইকারি ও খুচরা বাজারে এ ধরনের ভোজ্য তেলের দাম বেড়ে যে অবস্থানে উঠে এসেছে তা ২৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে বোতলজাত সয়াবিনের দাম আগের মতোই রয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় হওয়ায় দেশের বাজারেও ভোজ্য তেলের দাম বাড়ছে। তাঁরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের সরবরাহ কম। এর একটি কারণ করোনা মহামারি। দ্বিতীয়টি হলো চীনের বেশি হারে কেনা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই মুহূর্তে সরকারি পদক্ষেপ ছাড়া দামের রাশ টানা কঠিন। ভ্যাট ও ট্যাক্স কমিয়ে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যেতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা।
গত অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনে ভোজ্য তেলের ওপর শুধু আমদানি পর্যায়েই ভ্যাট নেওয়ার জন্য আবেদন করেছিল ভোজ্য তেল ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিট্যাবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। আবেদনে সংগঠনটি জানায়, বর্তমানে ভোজ্য তেলের মধ্যে সয়াবিন, পাম ও পাম অলিন তেলের ওপর আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ৫ শতাংশ আগাম কর (এটি), উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট এবং বিক্রয় ও সরবরাহ পর্যায়ে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের ওপর ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট রয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মানিকনগর, মালিবাগসহ বিভিন্ন খুচরা বাজারে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ১২০-১২৪ টাকা কেজি, যা সপ্তাহখানেক আগে ১১৮-১২০ টাকা ছিল। মৌলভীবাজারে পাইকারিতে সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে চার হাজার ৪০০ টাকা মণ (৩৭.৩২ কেজি) বা ১১৮ টাকা কেজি। গত সপ্তাহে পাইকারিতে ছিল চার হাজার ২০০ টাকা মণ বা ১১২ টাকা কেজি।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত বছর এ সময় খোলা সয়াবিন তেলের দাম ছিল ৯১-৯৩ টাকা লিটার।
সয়াবিনের মতো পাম তেলের দামও বেড়েছে। পাইকারিতে পাম সুপার বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার ৯০০ টাকা মণ, যা গত সপ্তাহে ১০০ টাকা কম ছিল। খুচরায় পাম সুপার বিক্রি হচ্ছে ১১০-১১৫ টাকা লিটার।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নতুন করে বোতলজাত তেলের দাম বাড়ানোর কোনো ঘোষণা মিল মালিকরা দেননি।
বাবুবাজারে পাইকারিতে মিনিকেট, নাজিরশাইল ইত্যাদি সরুচাল বিক্রি হয়েছে ৫৯-৬৪ টাকা কেজি। খুচরা বাজারে ছিল ৬০-৬৮ টাকা। ব্রি-২৮ পাইকারিতে ৪৯ ও খুচরায় ৫০ থেকে ৫২ টাকা কেজি। এ ছাড়া স্বর্ণা, গুটি, পাইজামের মতো মাঝারি ও মোটা চালের দাম পাইকারি ও খুচরায় আগের মতোই রয়েছে। পাইকারিতে ৪৬-৪৮ ও খুচরায় ৪৮-৫২ টাকা কেজি।
জানতে চাইলে বাবুবাজার রাইস মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন রনি বলেন, ‘আমদানি হওয়ায় এখন চালের বাজার কমতির দিকে। আরো কমে আসবে। এখন অনেক ব্যবসায়ী দাম কমে যাওয়ার শঙ্কায় চালের সরবরাহ কিছুটা কম রেখেছেন। ফলে বেচাবিক্রি কিছুটা কম। ধীরে ধীরে বাজার ভালো হবে বলেই আশা করছি।’
তেলের মতো চিনির দামও বেড়েছে কেজিতে দুই টাকা। চিনি এখন ৬৪-৭০ টাকা কেজি। অবশ্য কমেছে মসুর ডালের দাম। মোটা দানার মসুর ডাল কেজিতে পাঁচ টাকা কমে এখন ৬৫-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোট দানার দেশি ডাল কেনা যাচ্ছে ১০৫ টাকা কেজিতে।
চলতি সপ্তাহে কমেছে পেঁয়াজ, আলুসহ বেশ কিছু পণ্যের দাম। দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ১০ টাকা কমে এখন ৪০ টাকা। আদা-রসুনের দাম স্থির রয়েছে। আদা ৮০-১২০ টাকা কেজি, রসুন ৮০-১০০ টাকা কেজি। আলুও ১০ টাকা কমে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া স্বস্তি রয়েছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিমসহ বেশির ভাগ সবজিতেই। চলতি সপ্তাহে দেশি টমেটোর দাম কেজিতে ১০ টাকা কমে ৫০-৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
টিসিবির হিসাবে চলতি সপ্তাহে মোট ১৮টি পণ্যের দামে হ্রাস-বৃদ্ধি হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে আটটির, কমেছে ১০টির।
সুত্র: কালের কণ্ঠ
Leave a Reply