May 18, 2022, 10:38 am
মনিরুল ইসলাম : প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ(১৯১৪-১৯১৮) । এযুদ্ধ শুরু হয় ২৮ জুলাই ১৯১৪ সাল। শেষ হয় ১১ নভেম্বর ১৯১৮ সাল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে বৃটিশের হয়ে যুদ্ধে অংশ নেন বলীয়ান ব্যক্তিরা। এদের একজন হচ্ছে বর্তমান বাংলাদেশী বাঙ্গালী মিয়া চাঁন।
তাঁর স্মৃতি আজ অবহেলায় ও অযত্নে রয়েছে। ময়মনসিংহ জেলার ভালুকার আওলাতলী গ্রামে হবির বাড়ী ইউনিয়নের নির্জন পল্লীতে পড়ে আছে। তাঁর সাহসিকতার গল্প নতুন প্রজন্ম জানেন না। এমনকি এলাকার বর্শীয়ানরাই ছিঁটেফোটা জানেন। অথচ তাঁর রয়েছে গৌরবের গল্প। তিনি একজন সাধারন সহজ সরল জীবন যাপন করে গেছেন বলে কেউ তুলে ধরনেনি তাঁর বিজয় গাঁথা। আজ আমরা তাঁর কথায় তুলে ধরছি। বৃটিশ সরকারের হয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেন মিয়া চাঁন। তিনি একমাত্র বাংলাদেশী। জন্মস্থান নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার চন্দনপুর গ্রামে।
সোমবার ১১ নভেম্বর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ১০১ বছর পূর্তি হবে। এ দিবসকে সামনে রেখেই দেশ নিউজের এই আয়োজন।
মিয়া চাঁন যখন বৃটিশদের হয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেন তখন ভারত-পাকিস্তান বিভক্ত হয়নি। জন্ম হয়নি বাংলাদেশের। তিনি ইষ্ট ইন্ডিয়ান হয়েই যুদ্ধে অংশ নিয়ে একজন সাহসী যোদ্ধার পরিচয় দেন। এই সাহসিকতার স্বীকৃতি হিসেবে যুদ্ধ শেষ স্বীকৃতিও পেয়েছেন। তাঁকে ভূষিত করা হয় ২টি মেডেল দিয়ে। তৎকালীন সময়ে ইষ্ট ইন্ডিয়ার যে ৬ জন এই মেডেলল পান। মিয়া চাঁন তাঁদের একজন ছিলেন।
মিয়া চাঁন একটি মেডেল পান ক্যাম্পিয়ের জন্য। আরেকটি পান ভিক্টরি মেডেল। এছাড়া ওই সময় তিনি নানা পুরস্কারলাভ করেন।
বৃটিশদের হয়ে যুদ্ধে জয়ে হওয়ায় স্বদেশ ছেড়ে বিদেশের মাটিতে স্থায়ী হয়ে বসবাসের সুযোগও পান। তবে তিনি বৃটিশের কাজ থেকে কোন সহযোগিতা নেয়া ছাড়ায় চলে আসেন তার গ্রামে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মিয়া চাঁন কোন সহযোগিতা ছাড়ায় কৃষি কাজ করে তার জীবিকা নির্বাহ করে গেছেন।
মিয়া চাঁন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে আসেন নিজের জন্মস্থান নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলায় চন্দনপুর গ্রামে। এখানে কিছুদিন থাকার পর ময়মনসিংহ জেলার ভালুকায় কিছু জমি কিনে বসবাস শুরু করেন। এখানেই তিনি তাঁর জীবনের শেষদিনগুলো কাটান। শেষ নিঃশ্বাস করেন ১৯৬৮ সালে। জীবিত থাকাকালীন তিনি বাংলাদেশ সরকার ও বৃটিশ সরকারের কাছে কোন সহযোগিতা নেননি। বা পেতে তদবিরও করেননি। মৃত্যু কালে তিনি রেখে যান ২ ছেলে ১ মেয়ে।
তাঁর ছেলে-মেয়েরাও বাংলাদেশ সরকার ও বৃটিশ সরকারের কাছে আবেদন করেননি কোন সহযোগিতার জন্য। তবে তাঁর ছেলে-মেয়ের সন্তানরা বিষয়টি নিয়ে এখন ভাবতে শুরু করছেন। তারা গর্ব অনুভব করছেন তাদের দাদা বা নানা একজন গর্বিত যোদ্ধা। তিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। বিজয়ী হয়েছেন। যোদ্ধার স্বীকৃতিও পেয়েছেন। তবে তারা মিয়া চাঁনের মূল্যায়ন চান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সাহসী সৈনিক হিসেবে তাঁর স্মৃতি সংরক্ষণে বাংলাদেশ সরকার ও বৃটিশ সরকারের সহযোগিতা চান।ও
তাঁর ছেলের ঘরের নাতনী একজন কন্ঠশিল্পী। তার নাম স্বপ্না পারুল। তিনি বলেন, মিয়া চাঁন যখন প্রথম বিশ্ব যোদ্ধে গেছেন তখন বাংলাদেশ,ভারত,পাকিস্তান ভাগ হয়নি। মিয়া চাঁন ইস্ট ইন্ডিয়া হতে যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন। বিশ্বের অনেক দেশ থেকে প্রথম বিশ্ব যোদ্ধে অনেক সৈনিক অংশ গ্রহণ করেছিল কিন্তু বিজয়ের মুকুট সবাই পরতে পারেননি। বাংলার মাটির এমন সন্তান যিনি বিজয় অর্জন করেছেন। তিনি আমার দাদা মিয়া চাঁন। স্বপ্না পারুল বলেন, আমি সব কিছু জানার পর এখন আমার দাদাকে নিয়ে আমি গর্ব বোধ করি। আমি মনে করি এ গর্ব অহংকার শুধু আমার নয়, এটা সারা বাংলার মানুষের।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে মুক্তিযোদ্ধাসহ যেমন গুনি ব্যক্তিদের সন্মানিত করা হয় বা হচ্ছে তেমনি আমার দাদার কৃতিত্বকে সন্মানিত করা হউক আমরা চাই। তাঁর স্মৃতি ধরে রাখার ব্যবস্থা নেয়া হউক। চন্দনপুর গ্রামের পড়ে থাকা আমার দাদার অবহেলা স্মৃতি সংরক্ষণ করতে বৃটিশ সরকার এগিয়ে আসুক। যাতে নতুন প্রজন্ম জানতে পারে বাংলাদেশী একজন সাহসী যোদ্ধা রয়েছেন যিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেন। এবং বিজয়ী বেশে ফিরেন। আমাদের সরকারও এটা করতে পারে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে পারে।আমরা ও চন্দনপুর গ্রামের মানুষ এই আবেদন করছি।
তাঁর ছোট ছেলে নিজামউদ্দিনের মেয়ের ঘরের ছেলে আরিফুর রহমান পলাশও একই কথা বললেন। আমরা আজ গর্বিত। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে আমার পরিবারের কেউ অংশ নিয়েছেন। আমরা তাঁর মৃল্যায়ন চাই রাষ্ট্রীয় ভাবে।
চন্দনপুর গ্রামের বয়স্ক লোকজনদেরও একই কথা। তাদের কথা মিয়া চাঁন মিয়া চন্দনপুরের বাসিন্দা হলেও তিনি শেষ জীবনটি কাটান ভালুকায়। ওখানে তাঁর কবরটি অযত্নে পড়ে আছে। তারা আলাপ কালে বলেন,আমরা চাই সরকার ও বৃটিশ সরকার প্রথম বিশ্বযুদ্ধসহ অন্যান্য যুদ্ধে শরিক হওয়া যোদ্ধাদের খোঁজ খবর যেভাবে খবর রাখছেন। তাদের স্মৃতি ও গৌরব গাঁথা সংরক্ষণ করে জাতির সামনে তুলে ধরছেন। শুধু আমাদের গ্রামের মিয়া চাঁনই কেবল অবহেলিত। অযত্নে পড়ে রয়েছে তাঁর সমাধিস্থল। পারিবারিক উদ্যোগে তা ধরে রাখার চেষ্টা চলছে। এ কাজটা যেন বৃটিশ সরকার ও আমাদের সরকার করেন।
ভালুকার কেউ কেউ বলেন, মিয়া চাঁন খুবই একজন সাধারন মানুষ হিসেবে জীবনধারন করেছেন। বিশ্বযুদ্ধের একজন যোদ্ধা হিসেবে কারো সাথে অহংকার নিয়ে চলেননি। আমরা চাই এমন একজন ভালো মানুষের কথা বাংলাদেশসহ বৃটিশের নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে বৃটিশ ও বাংলাদেশ সরকার এগিয়ে আসুক।
মিয়া চাঁনের এক সহপাঠী বলেন, আমাদের বাংলাদেশে এমন এটটা রত্ন আছে, আমাদের দপশের অনেকেই জানেন না। আমরা চাই সরকার এই বাংলাদেশের একমাত্র বিজয়ী প্রথম বিশ্ব যোদ্ধার কৃতিত্বকে সন্মান জানাক। নতুন প্রজন্ম জানুক। তিনি বলেন, আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি .আজকে ভারতে এই যোদ্ধাদের ছয়জন এর নাম খোদাই করে লিখে রেখেছে। তাহলে আমরা কেন পারবো না আন্তর্জাতিক ভাবে আমাদপর এই খ্যাতি তুলে ধরতে চাই। আমরা আশা করি বর্তমান সরকার ও বৃটিশ সরকার উদ্যোগ নিবেন।
Leave a Reply